বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩, ০১:২০ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি :

জেলা/উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ : সাপ্তাহিক গাইবান্ধার বুকে পত্রিকার জন্য গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, থানা, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান/এলাকায় প্রনিতিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবিসহ সরাসরি অথবা ডাকযোগে সম্পাদক বরাবর আবেদন করুন।প্রকাশক ও সম্পাদক, সাপ্তাহিক গাইবান্ধার বুকে , গোডাউন রোড, কাঠপট্টী, গাইবান্ধা। ফোন: : ০১৭১৫-৪৬৪৭৪৪, ০১৭১৩-৫৪৮৮৯৮

সবাই নয়, কেউ কেউ সাংবাদিক

রজতকান্তি বর্মন / ৪৭৮ বার পঠিত
প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ৩০ জুলাই, ২০২১, ৬:১৩ অপরাহ্ন

আর দশটি পেশার মতো সাংবাদিকতাও একটি পেশা, মর্যাদাশীল এবং সৃজনশীল পেশা। মফস্বলে(জেলা-উপজেলা) যারা সাংবাদিকতা করেন, তারা কেউ কেউ সাংবাদিক, সকলেই সাংবাদিক নন। যিনি সাংবাদিক মানুষ তাকে ধরেই নেন তিনি শিক্ষিত, মেধাবী এবং সববিষয়ে তার কমবেশি জানাশোনা আছে।

কোনো একটা বিষয় কারো জানা জানা না থাকা দোষের নয়, কিন্তু একজন সাংবাদিকের জন্য তা দোষের এবং লজ্জারও। ঘটনা বা পরিস্থিতির বিশ্লেষণী ক্ষমতা থাকে বলে মানুষ সেই ঘটনা বা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান সাংবাদিকের কাছে। শুধু তাই নয়, মানুষ শব্দের প্রয়োগ বা বানান নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দে পড়লেও কোনো না কোনো সাংবাদিকের শরণাপন্ন হন।

সাংবাদিকতার প্রতি মানুষের যে সমীহ ও শ্রদ্ধাবোধ ছিল তা পাল্টে যেতে শুরু করেছে। কলিকাতার বাংলা সিনেমার একটা ডায়লগ শুনেছিলাম, ‘কাকু, পেছনে মিডিয়া লেলিয়ে দিলে সামাল দিতে পারবেন না।’ এখন মফস্বলে সাংবাদিক পরিচয় পেলেই মানুষ তাকে অশিক্ষিত, ধান্দাবাজ বা টাউট মাস্তান বলে ঠাওর করে। এ অবস্থা কেন সৃষ্টি হল? এরজন্য কি ‘সাংবাদিক’ পরিচয়ধারী ওই ব্যক্তিই শুধু দায়ি? না, তিনি একা দায়ি নন। এরজন্য দায়ি নিয়োগকারী টিভি, অনলাইন ও পত্রিকা কর্তৃপক্ষ। তবে নিশ্চয়ই সকলে নন।

ইদানীং তো শোনা যায়, সরকারি চাকরির মত টাকা দিলে মিডিয়ার কার্ড পাওয়া যায়। টাকা পেলে কর্তৃপক্ষের কাছে শিক্ষাগত যোগ্যতা-মেধার আর প্রয়োজন পড়ে না। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো মিডিয়া এক জেলাতেই একাধিক লোক নিয়োগ করেছে। এই যখন অবস্থা তখন প্রকৃত পেশাদার সাংবাদিকরা কী করবেন? অনেক সাংবাদিক তার প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা পান না। হাতেগোনা দুচারজন নিয়মিত বেতন পেয়ে থাকেন। আর মফস্বলের সাংবাদিকদের বেতনও আহামরি কিছু নয়। কথায় আছে, ‘মেয়েদের বয়স আর সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা জিজ্ঞেস করতে নেই’। কোন সাংবাদিকের বেতন কত জিজ্ঞেস করলে তিনি বিব্রত হন, লজ্জিত হন।

কিন্তু সাংবাদিককেও তো খেতে হয়, সমাজে মানুষের সাথে চলতে হয়। তাদের উপর হয়ত আরও কয়েকজন নির্ভরশীল। তাদেরও ভরণপোষণ জোগাতে হয়। নাকি সাংবাদিকের পেট নেই? নাকি পেট থাকলেও তারা পেটে পাথর বেঁধে থাকবে? আরে ভাই, জিডি করতে গেলেও তো একশ-দুইশ টাকা খরচ হয়, উকিল-মহুরির কাছে গেলেও চারপাঁচশ টাকা খরচ হয়ে যায়। মেধার তো একটা মূল্য আছে নাকি! আপনারা ব্যক্তিগত কোনো একটা নিউজের জন্য সাংবাদিককে দুইশ পাঁচশ টাকা দিলে, সেটা নেয়াই সাংবাদিকের অপরাধ হয়ে যায়!

এটা ঠিক, সাংবাদিক নামধারী কিছু ‘অপসাংবাদিক’ মানুষকে প্যাঁচে ফেলে, বিপদগ্রস্ত করে যেভাবে টাকা হাতিয়ে নেয়, তা অবশ্যই অনৈতিক ও অপরাধ। এই অপসাংবাদিকদের রোখার দায় কি শুধু সাংবাদিকদের? ঢাকায় যারা তথাকথিত মিডিয়া খুলে বসেছেন, তাদের দিকে আঙুল তোলেন না কেন?

সাংবাদিক আর অপসাংবাদিকদের এক করে দেখা ও ভাবা ঠিক নয়, এটা কোনো বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হতে পারে না। কিন্তু ইদানীং তাই হচ্ছে। কেউ কেউ পেশাদার সাংবাদিকদের নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন। সাংবাদিকদের সততা ও আয়-রোজগার নিয়ে নোংরা ইঙ্গিত করছেন। আরে ভাই, সাংবাদিকরা এ সমাজেই বাস করেন। নাকি? তারা তো কেউ মঙ্গলগ্রহ থেকে ছিটকে পড়েননি। সমাজ নষ্ট হলে, দুর্নীতিগ্রস্ত হলে তার প্রভাব সাংবাদিকদের উপরও পড়ে। নষ্ট সমাজের শিকার হয়ে দুচারজন সাংবাদিকও দুর্নীতিগ্রস্ত, অসৎ হয়ে পড়তে পারেন। তবে এ কথা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, অন্য যে কোনো পেশার চেয়ে সাংবাদিকতায় যুক্ত সাংবাদিকরা অনেক সৎ আছেন, মানবিক আছেন। সকলেই অসততার চর্চা করেন না, দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন না। এখনও অনেক সাংবাদিক আছেন, যারা সকালে চা-পরোটা খেয়ে সারাদিন দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করেন। এটা একধরনের তাড়না। সবার এই তাড়না থাকে না, একমাত্র সাংবাদিকদেরই এই তাড়না থাকে।

বহুশ্রুত সেই পুরনো কথাই বলতে হয়, ভালো সাংবাদিকের কোনো বন্ধু নেই। আজ যিনি খুশি হচ্ছেন, আবার কালকেই তিনি গোস্যা করছেন। কোনো একটি সংবাদ কারো পক্ষে যায়, আবার কারো না কারো বিপক্ষে যায়। পক্ষেরজন খুশি হলেও বিপক্ষেরজন শুধু অখুশি হন না, ক্ষুব্ধও হন। আর ক্ষুব্ধ ব্যক্তি তখন সাংবাদিককে লাল, নীল, সবুজ রঙে আখ্যায়িত করেন। রাস্তার ফুচকাওযালা, চাওয়ালা থেকে রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, অফিসের চাপরাশি, বড়বাবু থেকে বড় কর্তা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, শিল্পী, সংগঠক, পুলিশ, ব্যবসায়ী এমনকি কখনো কখনো সাধারণ মানুষও পান থেকে চুন ঘষলেই সাংবাদিককে গালি দেন। তারা ভাবেন, তাদের বাড়া ভাতা সাংবাদিকই ছাই ফেলে দিল। রাজনৈতিক নেতা ভাবেন, তার নিউজটা কেন ছোট করে ছাপা হল। আবার কোনো নেতা ভাবেন, নিউজে তার নাম কেন ছাপা হল না বা এই নিউজটা এভাবে কেন করল সাংবাদিক? ডাক্তার ভাবেন, হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসা পায় না, সে নিউজ কেন করবে সাংবাদিক? ইত্যাদি নানা দোষ সাংবাদিকের! সবাই তাদের মনের ঝাল, ক্ষোভ, ব্যর্থতা, অক্ষমতা, অসহায়ত্ব ঝাড়ে সাংবাদিকদের ওপর। গালি খাওয়ার তালিকায় সাংবাদিকরাই এখন শীর্ষে।

মোটকথা আপনি অনিয়ম-দুর্নীতি করবেন, কিন্তু তা প্রকাশ করা যাবে না। প্রকাশ করলেই সাংবাদিকের উপর নেমে আসে নানা অপবাদ, অসম্মাান। কিন্তু সাংবাদিকরা সবসময় দেশ ও মানুষের পক্ষেই কাজ করেন, কল্যাণের জন্যই কাজ করেন। আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় দুচারজন অসৎ- কপট সাংবাদিক আছে, সব পেশাতেই আছে এবং থাকবে। গড়ে সব সাংবাদিককে দোষ দেয়া অন্যায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সব খবর...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর